পালস অক্সিমিটার – রক্তের অক্সিজেনের পরিমাণ মেপে দেখার যন্ত্র

বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অক্সিজেনের দরকার হয় যা বাতাস থেকে ফুসফুসের মাধ্যমে আসে আমাদের রক্তে (ফুসফুস আবার রক্ত থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডও আলাদা করে নিশ্বাসের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়) । রক্ত তা শরীরের প্রত্যেকটি কোষে পাঠায়। আমাদের শরীরের সমস্ত কাজ নিয়ন্ত্রিত হয় এই কোষগুলির সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে।

কোষের কাজ চলার জন্য যে শক্তি লাগে সেই শক্তি আমরা যে খাবার খাই, সেগুলোর রাসায়নিক উপাদানের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় কয়েকটি ধাপে । সুস্থ থাকার জন্য আমাদের রক্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণে অক্সিজেন থাকতে হয়।

কোষ তার দরকারি অক্সিজেন পায় ধমনীর রক্ত থেকে যা ফুসফুস থেকে হৃৎপিণ্ড হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে (ধমনী বা আর্টারি অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে আর যে রক্তনালিকা কার্বন-ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্ত বহন করে—তাদেরকে আমরা বলি শিরা বা ভেইন) ।  

রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপা হয় ধমনীর রক্ত পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে। এর চেয়ে অনেক সহজ পদ্ধতি হলো পালস অক্সিমিটার নামের ছোট্ট একটা যন্ত্র ব্যবহার করা । এর জন্য শরীর থেকে রক্ত নেয়ারও দরকার হয় না, কোনো পরীক্ষাগারেরও দরকার হয় না।

পালস অক্সিমিটার একটি ছোট্ট ক্লিপের মতো আঙ্গুলের উপর আটকে দেয়া যায়, যা থেকে একটি লাল ও অদৃশ্য অবলোহিত আলো নির্গত হয় । যেকোনো আলোর মতো এই আলোও বিদ্যুৎচুম্বক তরঙ্গের অংশ। এই তরঙ্গ শরীরের কোন কোষ কতটুকু শোষণ করবে তা নির্ভর করে কী পরিমাণ পদার্থ এবং কোন ধরনের পদার্থের ভেতর দিয়ে তা আসছে তার ওপর। অক্সিজেনযুক্ত হিমোগ্লোবিনে পদার্থের পরিমাণ অক্সিজেনমুক্ত হিমোগ্লোবিনের চেয়ে বেশি।

পালস অক্সিমিটার ধমনীর রক্তে অক্সিজেন সম্পৃক্ততার পরিমাপ করে অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনমুক্ত হিমোগ্লোবিনের অনুপাতের হিসেব করে। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি হলে লাল আলোর শোষণ বেশি হবে, নির্গমন কম হবে।একিভাবে অবলোহিত আলোর শোষণও ঘটবে বেশি। ফলে ডিটেক্টর লাল আলো ও অবলোহিত আলোর অনুপাত হবে বেশ কম। আর রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম হলে ডিটেক্টরে শনাক্তকৃত লাল আলো ও অবলোহিত আলোর অনুপাত হবে বেশ বড়।

এই করোনাকালে অনেকেই শরীরে অক্সিজেন সম্পৃক্তির পরিমাণের দিকে নজর রাখছেন পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে। সাধারণত সুস্থ শরীরে রক্তের অক্সিজেন সম্পৃক্ততা ৯৫%-এর বেশি থাকে।

অক্সিমিটার ব্যবহারের সময় রুমে অন্য যেসব আলো থাকে সেগুলো রিডিংয়ে তেমন সমস্যা না করলেও গাঁয়ের রঙের তারতম্যের কারনে কিংবা আঙুলের নখে যদি গাঢ় রঙের নখপালিশ থাকে অক্সিমিটারের রিডিং-এ সামান্য তারতম্য ঘটতে পারে। যার কারনে একক সময়ে মাপা অক্সিজেন পরিমান থেকে সময়ের সাথে অক্সিজেন সম্পৃক্তির পরিমাণের দিকে নজর দিতে হবে বেশি ।

মূল উৎস ও বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *